€
ভূমিকা
দেশের উন্নয়নের মূল ভূমিকা হলো মানসম্মত শিক্ষা। আর এ শিক্ষার মূল ভিত্তি হলো প্রাথমিক শিক্ষা। প্রাথমিক শিক্ষার স্তরের শিক্ষার্থীদের বেড়ে ওঠার মধ্যে খুব, দারিদ্রতা ও পুষ্টিহীনতা প্রভিতি সংকট দূরীকরণ এখন পন্ডি শতভাগ পূরণ হয়নি। তবে জাতীয় উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রাথমিক শিক্ষা। মাত্র সমগ্র প্রাথমিক শিক্ষা ভবিষ্যৎ গঠন ও উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। শিশুদের দেশপ্রেম ও মানবিক মূল্যবোধ সৃষ্টির প্রথম ধাপ প্রাথমিক শিক্ষা।
সেখান থেকে শিশুরা জানতে পারে দেশ ও সমাজ সম্পর্কে। শিশুকাল থেকে দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ না হওয়া এবং সাংস্কৃতিক চর্চা না থাকায় তারা হাটছে বিপথে। একটি জাতি কিভাবে তৈরী হবে তা নির্ভর করে প্রাথমিক শিক্ষার উপর। প্রাথমিক শিক্ষা নড়বড়ে হলে শিক্ষার্থীরা হোঁচট খেয়ে পড়ে, সামনে এগোতে পারে না। তাই শিক্ষা অর্জনের মৌলিক ভিত্তি তৈরির মহাস্ত্র হলো প্রাথমিক শিক্ষা।
একটি শিশু ভবিষ্যতে কতটুকু ন্যায় নীতিবান, আদর্শবান, চরিত্রবান কিংবা দেশ জাতি সমাজের প্রতি কতটুকু দায়িত্ব হবে এটি অনেকাংশেই নির্ভর করে তার প্রাথমিক জীবনের শিক্ষার উপর তথা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। আজ আমরা যারা বাংলাদেশের মধ্যে সর্বোচ্চ বিদ্যাশিষ্ট এ অবস্থান করছি তারা কিন্তু অবশ্যই প্রাথমিক শিক্ষা তথা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে এখানে অবস্থান কর হয়।
বিভিন্ন কারণে অনেক শিক্ষার্থী আমাদের চোখের সামনে ঝরে পড়ছে। প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার মান নিম্ন মানের কারণে শিশুরা উপযুক্ত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং এক পর্যায়ে ঝরে পড়ছে।
প্রাথমিক শিক্ষায় ঝরে পড়ার প্রধান কারণ সমূহ :
€
৭০ দশকে বাংলাদেশে নিরীক্ষতার হার ৮০% ছিল প্রায়। বিদ্যালয় গমনযোগী বয়সী শিশুদের ৫০% মোট শিশু বিদ্যালয়ে ভর্তি হতো। এবং মেয়ে শিশু ভর্তির হার খুবেই কম ছিল। যত শিশু ভর্তি হতো তার একটা ৫ বছর প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করার আগেই বিভিন্ন শ্রেণীতে বিদ্যালয় ত্যাগ করতো।
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক পরিবর্তন ও উন্নয়নে নিরক্ষতার হার দ্রুত হ্রাস করা জরুরি বলে বিবেচিত হতে থাকে। নিরক্ষতার অভিশাপ দূর করার জন্য বিদ্যালয় গমনযোগী (শত ভাগ) শিশুকে বর্তমান প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে হচ্ছে। কিন্তু এই ১০০% শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও ৫ বছর মেয়াদি শিক্ষা সমাপনের পূর্বেই বিভিন্ন কারণে প্রায় ১৯% শিশু বিভিন্ন শ্রেণীতে ঝরে পড়ছে। যা প্রাথমিক শিক্ষায় একটা বড় ধরণের সমস্যা। বিপুল সংখক শিক্ষার্থীর ঝরে পড়া রোধ করতে না পারলে জাতিকে শিক্ষিত করা সম্ভব হবে না।
ঝরে পড়ার নানা কারণ রয়েছে :
১. দারিদ্রতা। পিতামাতা বিদ্যালয়ে না পাঠিয়ে বিভিন্ন কাজে নিয়োগ করে থাকে।
২. অভিভাবকের নিরীক্ষটা ও অসচেতনতা।
৩. নিরীক্ষর পরিবার থেকে আসা শিশুদের শিক্ষাগত দিক থেকে শুধু অসুবিধাগ্রস্থই নয়, তারা আর্থিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকেও পশ্চাপদ হওয়ায় লেখাপড়ার প্রেরণা ও উৎসাহের অভাব থাকে।
৪. বাড়িতে পঠন পাঠনে সহায়তা করার পরিবেশ তাদের পরিবার ও বাড়িতে একেবারেই নেই। ফলে শিক্ষা জীবনের প্রথমেই পড়াশুনায় অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে থাকে এবং পড়ার প্রতি নিরুৎসাহের কারণে ঝরে পড়ে।
৫. এছাড়াও বিদ্যালয়ের পরিবেশ ও অবস্থাগত কারণ। শিক্ষকের আন্তরিকতার ও ভালোবাসার অভাব। শিখন পরিবেশ আকর্ষণীয় না হওয়া বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের অনিয়মিত উপস্থিতি অভিভাবকের বাসস্থানের পরিবর্তন, বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের দীর্ঘদিন বিদ্যালয় বন্ধ থাকা, বিদ্যালয়ের দূরত্ব ও প্রাকৃতিক বাধা এসব কারণে শিশুরা নির্ধারিত যোগ্যতা অর্জন না করার ফলে ঝরে পড়ে।
৬. বাল্য বিবাহ। পরীক্ষাভীতি নিয়ন্ত্রণহীন জন্মহার শিশুশ্রম, শিক্ষাক্রমের অসংগতি, বিদ্যালয়ের সময়সূচি, অনুন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা।
লক্ষ্য উদ্দেশ্য :
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রাথমিক শিক্ষাই হলো প্রথম সোপান। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গমনযোগী সকল শিশুদের জন্য এ শিক্ষা লাভ করা একটি গণতান্ত্রিক অধিকার। জাতি গঠনে শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।
বাংলাদেশের শিশুর দৈহিক, সামগ্রিক সামাজিক, নৈতিক, অধ্যাবতিক ও নান্দনিক বিকাশ সাধন এবং বিজ্ঞান মনস্কতা সৃজনশীলতা এবং উন্নত জীবনব যাপনের স্বপ্ন দর্শনে তাদের উদ্বুদ্ধ করা। লক্ষণীয় বিষয় হলো শিশুর শিক্ষা শুধু চাহিদা মেটানোর জন্য নয়। ভবিষ্যতে সে যেন একজন সুনাগরিক তথা দক্ষ জনশক্তি হিসেবে সমাজের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে সেদিকেও দৃষ্টি রাখতে হবে।
বিশ্বায়নের যুগে আর্থসামাজিক অবস্থা ও জীবন দ্বারা দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে। এ পরিবর্তনের সাথে খাপ খেয়ে চলার জন্য নতুন প্রজন্মকে এমন যোগ্যতা ও সামর্থ অর্জন করতে হবে যাতে ভবিষ্যতে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সে সার্থকভাবে জীবন যাপন করতে সক্ষম হয়। শিশুর জন্য শিক্ষা উদ্দেশ্য নির্ধারণে সমাজের চাহিদা ও চিন্তা ভাবনার আলোকে কি ধরণের জ্ঞান ও সমকুশীলতা ও দক্ষতা অর্জন করা প্রয়োগে তা বিবেচনা করতে হবে।
শিক্ষার ক্ষেত্র নির্বাচনের সময় শিক্ষার্থীদের বয়স, মেধা, সামর্থ প্রভৃতি বিবেচনা করে পাঠের বিষয়বস্তু সংগঠিত করা প্রয়োজন। নিরক্ষতা বাংলাদেশের ম্যান ও রাষ্ট্রীয় জীবনের একটি প্রধান মৌলিক সমস্যা। এ নিরক্ষতা সংযুদ্ধকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রাখে। সার্বিকভাবে যত বিনিময়ে অক্ষম করে রাখে। তাই আইনের চোখে সব মানুষ সমান হলেও নিরক্ষতার জন্য তা দেখা যায়না। মোট কথা নিরক্ষতা অন্ধত্বের পৃষ্টপোষক।