আসালামু আলাইকুম
কেমন আছেন সবাই। আশাকরি সবাই অনেক ভালো আছেন। তো আজকে আমরা আলোচনা করবো ব্যান্ডউইথ নিয়ে। ওয়েব ডিজাইন বা ডেভেলপমেন্ট করেন অথচ ব্যান্ডউইথ কি তা জানেনা এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুস্কর। আবার যারা শুধু ব্লগিং বা নিজের ব্যাক্তিগত ওয়েবসাইট বানাতে চান তাদের জন্যও ব্যান্ডউইথ কি তা জানা জরুরি।তাই আজকের এই পোস্টে আমরা ব্যান্ডউইথ কি এবং একটি ওয়েবসাইটের জন্য কতটুকু ব্যান্ডউইথ লাগতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করবো। তো চলুন শুরু করা যাক।
হোস্টিং ব্যান্ডউইথ কি ?
প্রতি সেকেন্ডে ডাটা ট্রান্সফারের হারকে ব্যান্ডউইথ বলে। ওয়েবসাইটের ব্যান্ডউইথ হলো ওই সাইটে ব্যবহারকারীদের ডাটা ট্রান্সফারের হার। ব্যান্ডউথকে bps (বিট পার সেকেন্ড ) দ্বারা প্রকাশ করা হয়। অর্থাৎ এক সেকেন্ডে কত বাইট ট্রান্সফার হয়। হোস্টিং ব্যান্ডউইথ হচ্ছে প্রতিসেকেন্ডে আপনার ওয়েবসাইটের ইউসাররের প্রতি সেকেন্ডে ডাটা ট্রান্সফার এর হার। অর্থাৎ একজন ওয়েবসাইট ইউসার যখন আপনার ওয়েব পেজ ব্রাউজ করে তখন সার্ভার থেকে ওই পেজ এর সমপরিমাণ ডেটা ট্রান্সফার হয়।
ধরুন আপনার একটা পেজ এর সাইজ হলো ২০০ কিলোবাইট। এখন কেউ যদি আপনার ওই পেজটি একবার ব্রাউজ করে তাহলে আপনার হোস্টিং সার্ভার থেকে ২০০ কিলোবাইট ডাটা ট্রান্সফার বা খরচ হবে। যদি ৫ জন ওই পেজটা ব্রাউজ করে তাহলে ১০০০ কিলোবাইট বা প্রায় ১ মেগাবাইট ডেটা খরচ হবে।
সুতরাং একটি ওয়েবসাইটে যতবেশি ভিজিটর আসবে সেই সাইটের ততবেশি ডাটা ট্রান্সফার হবে। যা ওই সাইটের হোস্টিং সার্ভার থেকে খরচ হবে। কোম্পানির ধরণ অনুযায়ী একেক কোম্পানি একেক রকম ব্যান্ডউইথ প্রদান করে। আবার আপনার হোস্টিং প্যাকেজের উপর ও ব্যান্ডউইথ এর পরিমান কম বেশি হয়ে থাকে। যেমন ১ জিবি হোস্টিং এর সাথে যদি ১০০ জিবি ব্যান্ডউইথ থাকে তাহলে ৫ জিবি হোস্টিং এর সাথে ৫০০ জিবি হোস্টিং থাকবে। আবার অনেক কোম্পানি আছে যারা আনলিমিটেড ব্যান্ডউইথ দিয়ে থাকে।
হোস্টিং ব্যান্ডউইথ এর প্রকারভেদ
হোস্টিং ব্যান্ডউইথ মূলত ২ প্রকার হয়ে থাকে। এক লিমিটেড ব্যান্ডউইথ। আর দুই আনলিমিটেড ব্যান্ডউইথ। লিমিটেড ব্যান্ডউইথ হলো কোনো নির্দিষ্ট পরিমান ডাটা ট্রান্সফার লিমিট। যেমন সেটা ১ মেগাবাইট ও হতে পারে আবার ১০০০ টেরাবাইট ও হতে পারে। তবে সেটা নির্দিষ্ট ভাবে বলা থাকবে এবং ওই পরিমান ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করলে তৰফৰ সাইট ডাউন হয়ে যাবে। অর্থাৎ ভিজিটর সাইটে আসলে সাইট অন হবে। না
আর আনলিমিটেড হোস্টিং হলো যার কোনো লিমিট নাই। অর্থাৎ আপনার সাইটে যে পরিমান ভিজিটর এ আসুক না কেন আপনার সাইটে তার প্রভাব পড়বে না। তবে হোস্টিং কোম্পানির আনলিমিটেড ব্যান্ডউইথ ক্যাপাসিটি আগে থেকে জেনে নেয়া ভালো। অর্থাৎ ওই কোম্পানির আসলেই আনলিমিটেড ব্যান্ডউইথ দেয়ার মতো ক্ষমতা আছে কি না তা শিউর হয় জরুরি।
কতটুকু হোস্টিং নেয়া জরুরি ?
আপনার ওয়েবসাইটের জন্য কতটুকু ব্যান্ডউইথ নেয়া জরুরি তা নির্ভর করে আপনার সাইটের উপর। প্রথমে হিসেবে করে নিবেন আপনার সাইটে প্রতি মাসে কি রকম ভিজিটর আস্তে পারে। কারণ একেক জনের ওয়েবসাইট একেক রকম হয় এবং একেক সাইটের ভিজিটর একেক রকম। তাই আপনার ওয়েবসাইট টি কি টাইপের হবে এবং ভবিষ্যতে ওই সাইটে কি পরিমান ভিজিটর আসতে পারে আর কতক্ষন ব্রাউজ করতে পারে তার উপর নির্ভর করে ব্যান্ডউইথ নিতে হবে।
চলুন ছোট্ট একটা উদাহরণ নেই। ধরুন আপনার একটা ওয়েবপেজ এর সাইট ১০০ কিলোবাইট তাহলে একজন ভিজিটর আপনার সাইট একবার ভিজিট করলে আপনার ১০০ কিলোবাইট ব্যান্ডউইথ খরচ হবে। এখন আপনার ওয়েবসাইটে যদি ১০,০০০ ভিজিটর মাসে আসে এবং একবার ওই পেজ ভিজিট করে তাহলে আপনার ১০০ × ১০০০০ = ১ গিগাবাইট (প্রায়) .
তাহলে আপনার পেজ যত বেশি হবে এবং যত পেজ ভিজিট হবে তার উপর ভিত্তি করে ব্যান্ডউইথ কম বেশি হবে। কারণ একজন ভিজিটর ওয়েবসাইটে আসলে একাধিক পেজ ভিজিট করে থাকে। আবার একেক পেজ এর সাইট একেক রকম হয়ে থাকে। তাই আপনার সাইটের আনুমানিক ভিজিটর হিসেবে করে ব্যান্ডউইথ নেয়া জরুরি।
তবে সবথেকে ভালো হয় আনলিমিটেড ব্যান্ডউইথ নেয়া। তাহলে আর আপনাকে টেনশন করতে হবে না। ভিজিটর যতই আসুকনা কেন আপনার সাইটের সার্ভার ডাউন হবে না। তাই হোস্টিং কেনার সময় ভালোমানের কোনো হোস্টিং প্রোভাইডার খুজুন যে প্রোভাইডার আনলিমিটেড ব্যান্ডউইথ দিয়ে থাকে।
ভালোমানের হোস্টিং প্রোভাইডার কিভাবে চিনবেন
হোস্টিং কেনার আগে হোস্টিং প্রোভাইডার কতটুকু ভালো তা জানা জরুরি। কারণ হোস্টিং প্রোভাইডারের মানের উপর আপনার ওয়েবসাইটের মান নির্ভর করে। ধরুন আপনি এমন এক কোম্পানি থেকে হোস্টিং নিলেন যার হোস্টিং সার্ভার নিম্ন মানের। তাহলে আপনাকে সে যতই বেশি হোস্টিং স্পেস দিক না কেন তাতে আপনার কোনো লাভ নাই। সাইট যদি ধীর গতির হয় ভিজিটর কখনোই সাইটে আসবে না। আর স্পেস কম হউক কিন্তু সাইটের স্পিড যদি বেশি থাকে তাহলে আপনার জন্য অনেক ভালো।
আরেকটা কথা হলো অনেক কোম্পানি হোস্টিং কেনার সময় আপনাকে বলবে ব্যান্ডউইথ শেষ হলে তারা বাড়ায় দিবে কিন্তু যখন ব্যান্ডউইথ শেষ হয় তখন তারা বাড়াইতে অস্বীকার করে বা অনেক বেশি টাকা চেয়ে বসে থাকে। তাই ভালো হোস্টিং কোম্পানি থেকে হোস্টিং কেনা খুব জরুরি।
এখন আপনার প্রশ্ন আসতে পারে ভালো হোস্টিং কোম্পানি কিভাবে চিনবো। দেখুন অনেক হোস্টিং রিভিউ ওয়েবসাইট আছে যেখানে গিয়ে আপনি হোস্টিং কোম্পানির মান যাচাই করতে পারবেন। যে কোম্পানিকে আপনার ভালো লাগবে সে কোম্পানি থেকে হোস্টিং ক্রয় করবেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে নেমচিপ কে সাপোর্ট করবো। নেমচিপ কোম্পানির হোস্টিং অনেক ভালো এবং তাদের সাপোর্ট ও অনেক ভালো। আপনি চাইলে নেমচিপ থেকে হোস্টিং নিতে পারেন। কারণ তারা স্বল্প মূল্যে ভালো সার্ভিস দেয়। এবং এ কোম্পানি অনেক ভালো। নেমচিপ ২০$ বা বাংলাদেশী টাকায় অর্থাৎ ১৫০০ টাকায় ২০ জিবি হোস্টিং স্পেস দিয়ে থাকে এবং সাথে আনলিমিটেড ব্যান্ডউইথ দেয়। এই প্যাকেজে আপনি মোটামুটি যেকোনো ওয়েবসাইট বানাতে পারবেন। নেমচীপের রিভিউ আমাদের এই ওয়েবসাইটে পরবর্তীতে দেয়া হবে। আপনারা চাইলে সেটা পড়তে পারেন।
পরিশেষে
তো এইচিলো আজকের পোস্টার আলোচনা। আশাকরি আপনারা ব্যান্ডউইথ কি তা বুঝতে পেরেছেন। তারপরেও কারো যদি কিছু বুঝতে অসুবিধা হয় ত্তাহলে কমেন্ট এ জানাতে পারেন। আমি তাদের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবো। তো পরিশেষে এটাই বলতে চাই যে, আপনার স্বপ্নের ওয়েবসাইটটি বানানোর আগে অবস্যই ভালো কোম্পানি থেকে হোস্টিং নিবেন। কারণ আপনার ওয়েবসাইটের পারফরম্যান্স আপনার ওয়েবহোস্টিং এর উপর বেশি নির্ভর করি। ধন্যবাদ পোস্টি মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য।